ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই দুই বন্ধু অনলাইন ব্যবসায়ের পথে পা বাড়িয়েছিল। তিন বছরের ব্যবধানে একজনের প্রতিষ্ঠানে ২৬ জন কর্মচারী থাকলেও, অন্যজন ব্যবসা থেকে বিদায় নিয়েছে। কেন? মূল কারণ হিসেবে ওয়েবসাইটের অভাবকেই চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য ফেসবুক একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলেও, ওয়েবসাইটের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ফেসবুক পেজ মূলত একটি প্রচারের মাধ্যম মাত্র।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সচেতন ক্রেতারা অনলাইন দোকানগুলোকে বেশি বিশ্বাস করেন। তাই অনেকেই নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্র্যান্ড গড়ে তুলছেন।
আসুন আলোচনা করি, ফেসবুকের পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট অনলাইন ব্যবসার জন্য কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কখনোই নিশ্চিত হতে পারেন না যে ফেসবুক পেজটি আপনারই
একটু ভেবে দেখুন তো ফেসবুক পেজের পাশাপাশি আজ যদি আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকতো তাহলে কোন প্ল্যাটফর্মটিকে আপনি নিজের বলে মনে করতেন? নিশ্চয়ই ওয়েবসাইটটিকে! কারণ এটি আপনার নিজস্ব পরিচয়, আপনার সাইট, আপনার মাধ্যম। অন্যদিকে ফেসবুক একেবারেই তার উল্টো। এতে তৈরি করা প্রোফাইল, গ্রুপ, পেজের জন্যেও একই কথা! এর কোনোটিই আপনার নিজের নয়। সুতরাং ব্যবসা করতে হলে ওয়েবসাইট জরুরি। এমনকি শুধুমাত্র ফেসবুকে ব্যবসা করতে গেলেও একটি ওয়েবসাইট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চাইলেই যেকোনো সময় নিজের কোম্পানির উপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে! হুট করে যে কারো আইডি বন্ধ করে দেওয়া, গ্রুপ মুছে দেওয়া, পেজ এড শো অফ করে দেওয়া কিংবা পুরো ফেসবুককেই বন্ধ করে দিতে পারে। এই অধিকার তার আছে। এখন চিন্তার বিষয় হলো ঠিক ওই মুহূর্তে আপনার কি করার থাকবে?
এই যে আপনি ওয়েবসাইটের গুরুত্বকে এড়িয়ে গিয়ে কেবল একটি ফেসবুক পেজকেই ভরসা করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তা কি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে না? অবশ্যই পারে। এক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবসায় একটি স্থায়ী ঠিকানা খুবই জরুরি। নিজের ব্যবসাকে ঝুঁকিতে রেখে চালাতে না চাইলে একটি ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার নিখুঁত সমাধান। ওয়েবসাইটটি যেমন আপনার হবে তার ঠিকানাসহ পুরোটাই থাকবে আপনার নিয়ন্ত্রণে। সুতরাং এতে কাজ করার মাধ্যম হারানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
একটি ওয়েবসাইট হল আপনার অনলাইন ব্যবসার মূল দরজা
কল্পনা করুন, আপনার ব্যবসা একটি বাড়ি। এই বাড়ির প্রবেশদ্বারই হলো আপনার ওয়েবসাইট। যেমন একটি বাড়ি ছাড়া আপনি কোথাও থাকতে পারবেন না, তেমনি একটি ওয়েবসাইট ছাড়া আপনার অনলাইন ব্যবসার কোনো স্থায়ী ঠিকানা থাকবে না।
আপনি নিশ্চয়ই “Hub” শব্দটি শুনেছেন। Hub হলো একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যেখান থেকে সবকিছু শুরু হয়। একটি ওয়েবসাইটও ঠিক তেমনই আপনার অনলাইন ব্যবসার একটি কেন্দ্রীয় স্থান। এখান থেকেই আপনার গ্রাহকরা আপনার সম্পর্কে জানবে, আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানবে এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় যেখানে আপনার কোম্পানির পরিচয় হাইলাইট করার সুযোগ কম থাকে,সেখানে একটি ওয়েবসাইটে চাইলে আপনি সব ধরনের ইনফরমেশন রাখতে পারেন। হতে পারে সেটি আপনার কোম্পানি সম্পর্কে, সার্ভিস সম্পর্কে কিংবা আপনার সম্পর্কে।
ফেসবুক যেহেতু একটি বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাটফর্ম, তাই ব্যবসাকে নিজের মতো করে তুলে ধরতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। একটি ওয়েবসাইট এই সীমাবদ্ধতা দূর করে আপনাকে সম্পূর্ণ সুযোগ দেয়। এটি যেন আপনার নিজস্ব ডিজিটাল দোকান, যেখানে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা যেভাবে চান তুলে ধরতে পারেন। একইসাথে, একটি ওয়েবসাইট আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। কারণ অনেকেই ফেসবুকে কম সময় ব্যয় করেন, ফলে আপনি অনেক সম্ভাব্য গ্রাহককে হারাতে পারেন।
আপনার ব্যবসার মুখ ওয়েবসাইট
একটি ওয়েবসাইট হল আপনার ব্যবসার একটি অনন্য পরিচয়পত্র। এটি আপনার ব্র্যান্ডকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে এবং আপনার পেশাদারিতার পরিচয় দেয়। ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মতো নয়, একটি ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার ব্যবসাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। ফেসবুক পেজের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে নিজের মতো করে সাজাতে পারবেন। প্রোফাইল ছবি আর কভার ছবির সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি অংশকে আপনার ইচ্ছামতো ডিজাইন করতে পারবেন। এ কারণেই একটি ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসার জন্য একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম।
একটি ওয়েবসাইট খোলা মানে নতুন জগতের দরজা খুলে দেয়া। নিজের পণ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি, একটি ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার ব্যবসায়ের উপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ দিতে সাহায্য করবে। আপনি নিজের মতো করে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং একজন দক্ষ ব্যবসায়ীর ছবি তুলে ধরতে পারবেন।
ফেসবুক পেইজের কার্যক্ষমতা যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, এর ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা সবসময়ই থেকেই যায়। বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনে এবং ব্যবসায়িক তথ্য প্রকাশে ফেসবুক পেইজের কার্যকারিতা সীমিত। একটি ফেসবুক পেইজে আপনি আপনার ব্যবসার সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরতে পারবেন না। কোন সেবা দেওয়া হয়, সেগুলোর দাম কত, আপনার দলের সদস্যরা কারা এবং তারা কী কাজ করে, এইসব তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা ফেসবুক পেইজে বেশ কঠিন।
অন্যদিকে, একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। আপনার পণ্য বা সেবার বিস্তারিত বর্ণনা, দামের তালিকা, দলের সদস্যদের পরিচয় এবং তাদের কাজের বিবরণ সহ সব ধরনের তথ্য একটি ওয়েবসাইটে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা যায়।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা অত্যন্ত জরুরি
আজকের ডিজিটাল যুগে অনলাইন ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক। শুধু ফেসবুক পেজ থাকলেই আর চলবে না। একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকলে ব্যবসা আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে। আজকাল গ্রাহকরা একটি পেশাদার ওয়েবসাইট দেখে কোনো কোম্পানিকে আরও বেশি বিশ্বাস করে। তাই যারা অনলাইনে ব্যবসা করতে চান, তাদের উচিত দ্রুত একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা।
ওয়েবসাইটের ডাটা কাজে লাগিয়ে রি মার্কেটিং করা
আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আগ্রহী গ্রাহকদের কাছে পুনরায় পৌঁছাতে চান? আপনার ওয়েবসাইট এখানে আপনার সেরা সহযোগী হতে পারে। ফেসবুক পেজকে ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে আসা দর্শকদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এই তথ্য ব্যবহার করে আপনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বিশেষ বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন।
একটি ওয়েবসাইট হলো লাইফ টাইম অ্যাসেট
কেবল ফেসবুকের উপর নির্ভর করে অনলাইন ব্যবসা করা বিপজ্জনক হতে পারে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যেকোন সময় নিজেদের নিয়মকানুন পরিবর্তন করতে পারে। ফেসবুকের নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই অনলাইন ব্যবসার পরিকল্পনা সতর্কতার সঙ্গে করুন।
অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে তো একটি ওয়েবসাইট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেটি বুঝতে পারলেন! সাথে এটাও নিশ্চয় বুঝে গেছেন যেনো-তেনোভাবে সাইট বানালেই ওয়েবসাইটের অভাব দূর হবে না। এক্ষেত্রে দরকার মানসম্মত ওয়েবসাইটের। যা খুব স্বল্প সময়েই BitCommerz থেকে নিজেই তৈরি করে নিতে পারবেন। ওয়েবসাইট সম্পর্কিত যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন।
প্রতিটি অনলাইন বিজনেসে একটি ওয়েবসাইট থাকা মানেই সফলতার হাতিয়ার থাকা। যারা ইতিমধ্যেই অনলাইন বিজনেস শুরু করে দিয়েছেন, তারা কিছুটা হলেও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিন। আর যারা এখনো কোনো বিজনেস শুরু করেননি তবে প্ল্যানিং করছেন তারা সবার আগে ওয়েবসাইটের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। ফলে এক্ষেত্রে সফল হওয়াটা খুব সহজ হয়ে যাবে।
অনলাইন বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু লেখা –
১। https://blog.bitcommerz.com/business-needs-ecommerce-website-today-for-genz/