ডিজিটাল যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজতর হয়েছে এবং অনেক জটিলতা দূর হয়েছে। ইন্টারনেট, পৃথিবীকে আমাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। শুধু বিনোদন নয়, ইন্টারনেট এখন অনেকের কাছে আয়ের একটি প্রধান উৎস। আপনি আপনার বাড়িতেই বসে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং আপনার গ্রাহক হতে পারে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষ।
কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করার পূর্বে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে অনলাইন ব্যবসা, যেখানে প্রতিযোগিতা অধিকতর তীব্র, সেখানে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। একজন অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বা লক্ষ্য থাকা আবশ্যক। এই দৃষ্টিভঙ্গিকেই আমরা ‘লক্ষ্য’ বা ‘উদ্দেশ্য’ বলতে পারি। তাই আপনার ব্যবসায়িক লক্ষ্য স্পষ্ট করে নিন। একটি সফল অনলাইন ব্যবসা গড়ে তুলতে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করুন। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া কোনো ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করা উচিত নয়।
অনলাইন ব্যবসা শুরু করা আর কোনো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবতা। তবে, এই যাত্রা সহজ বা কঠিন, তা নির্ভর করে কতটা প্রস্তুতি নিয়ে আপনি এতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, সঠিক কৌশল এবং বাজার বিশ্লেষণ—এগুলো হলো সফলতার মূল চাবিকাঠি। অনেক নতুন উদ্যোক্তা এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোকে হালকাভাবে নিয়ে থাকেন। ফলে, তাদের ব্যবসা যেমন আশা করা মতো এগোয় না, তেমনি টিকে থাকার লড়াইয়েও পড়তে হয়।
আমরা এই লেখায় অনলাইনে ব্যবসা শুরু ও পরিচালনার বিস্তারিত তথ্য দেব। অনলাইন ব্যবসা কী, কীভাবে এটি শুরু করা যায় এবং সফল হওয়ার জন্য কী কী ধাপ অনুসরণ করা উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই নিবন্ধটি আপনাকে অনলাইন ব্যবসার জগতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করবে।
চলুন তাহলে অনলাইন ব্যবসায় কি তা থেকেই শুরু করা যাক –
অনলাইন বিজনেস কী ?
ইন্টারনেটের যুগে ব্যবসা করার নতুন এক উপায় হলো অনলাইন ব্যবসা। এটি হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে পণ্য বা সেবা বিক্রয় এবং ক্রয় সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন ঘরে বসে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছে যে কোনো পণ্য কিনতে পারছে। এই প্রক্রিয়াকেই অনলাইন ব্যবসা বলে।
অনলাইন ব্যবসায়ের পরিসংখ্যান
দিন যাচ্ছে, অনলাইনে কেনাকাটা করার প্রবণতা ততই বাড়ছে। বিশেষ করে ব্যাংক কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে, ব্যাংক কার্ড দিয়ে ই-কমার্সে যে পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে তা চমকে দেওয়ার মতো। এই সময়কালে প্রায় ১৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বেশি। আগের বছর এই সময়ের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
অনলাইন ও অফলাইন ব্যবসায়ের পার্থক্য
আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। ই-কমার্স নামে পরিচিত এই ব্যবসায়, পণ্য বা সেবা সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। অনলাইনে বিজ্ঞাপন, বিক্রয় এবং পরিশোধের সব কাজই সম্পন্ন হয়।
অনলাইন ব্যবসা শুধুমাত্র পণ্য কেনাবেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি নিজের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করেন, তবে তাও একটি লাভজনক অনলাইন ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
অনলাইন জগতে আয়ের এক জনপ্রিয় মাধ্যম হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এই পদ্ধতিতে অন্য কোম্পানির পণ্য বিক্রয় করে নির্দিষ্ট হারে কমিশন অর্জন করা যায়। অনলাইনে কেবল পণ্য বিক্রয়ই নয়, আরও অনেক রকমের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ চালানো যায়। যেমন, কোনো সেবা প্রদান, ডিজিটাল পণ্য বিক্রয় ইত্যাদি। এগুলো সরাসরি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত না হলেও, ডিজিটাল যুগে এগুলোকেও ব্যবসায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আধুনিক যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। এই ধরনের ব্যবসাকেই অনলাইন ব্যবসা বলে। আপনি চাইলে একটি অনলাইন দোকান, একটি ব্লগ, একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে অথবা অন্য কোনো অনলাইন সেবা দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আমরা যেমন একটি ইটের দোকানে ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করি, তেমনি অনলাইনে একটি দোকান চালানোর জন্যও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু এই দুই ধরনের ব্যবসার মধ্যে পার্থক্যগুলো খুবই লক্ষণীয়। যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব অনলাইন ব্যবসা তার সুবিধার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। আসুন, অনলাইন ও অফলাইন ব্যবসার মধ্যে এই পার্থক্যগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক –
১. অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে আপনার আর কোনো ভাড়াটিয়া দোকান বা অফিসের দরকার নেই। মাত্র একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। ঘরে বসেই আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু, সাধারণ দোকান বা অফিস ছাড়া গ্রাহকরা আপনার পণ্যের দিকে আকৃষ্ট হবে না।
২. আধুনিক যুগে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করা বেশ সহজ। অল্প পুঁজি দিয়েই অনেক ধরনের অনলাইন ব্যবসা করা সম্ভব। কখনো কখনো কোনো ধরনের আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াইও অনলাইনে ব্যবসা শুরু করা যায়। কিন্তু, অফলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সাধারণত কিছুটা বিনিয়োগ করতে হয়। বর্তমান সময়ে কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়া বা খুব কম বিনিয়োগে অফলাইন ব্যবসা শুরু করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়।
৩. এঅনলাইন ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর অবিরাম প্রাপ্যতা। গ্রাহকরা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকেই আপনার পণ্য বা সেবা কিনতে পারবেন। একটি অনলাইন দোকান ২৪/৭ খোলা থাকে, যার ফলে আপনার ব্যবসায়ের আয়ের সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। অন্যদিকে, একটি অফলাইন দোকানের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অবশ্যই দোকানে গিয়ে পণ্য কিনতে হবে এবং দোকানের খোলা সময়ের মধ্যেই কেনাকাটা সম্পন্ন করতে হবে। বিভিন্ন কারণে অফলাইন দোকান বন্ধ থাকলে গ্রাহক হারানোর সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, অনলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে অনেক বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করা সম্ভব এবং ফলে আয় বাড়ানোও সহজ হয়।
৪. আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার অনলাইন ব্যবসা আপনাকে অনুসরণ করবে। একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যেকোনো কোণ থেকে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। অফলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে এমন স্বাধীনতা নেই। আপনাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত থাকতে হবে।
৫. অফলাইন দোকানগুলি আপনাকে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে সীমাবদ্ধ রাখে। কিন্তু, একটি অনলাইন ব্যবসায় আপনাকে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সাথে সংযোগ করার সুযোগ দেয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি সারা বিশ্ব থেকে ক্রেতা আকর্ষণ করতে পারেন। তবে, সফল হওয়ার জন্য ব্যবসায়ের প্রচার প্রচারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ইন্টারনেটের দোকানে পণ্যের দাম কম থাকার প্রধান কারণ হলো ভাড়া বাবদ কোনো খরচ নেই। অনলাইন ব্যবসায়ীদের অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় তারা পণ্যের দাম কম রাখতে পারে। ফলে গ্রাহকরা অনলাইনে কম দামে পছন্দের পণ্য কিনতে পারে।
অনলাইন বিজনেস শুরু করার সেরা গাইডলাইন
ব্যবসায় সম্পর্কে আমরা অনেক কথা শুনি এবং বলি। কিন্তু একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য শুধু উৎসাহই যথেষ্ট নয়। সফল ব্যবসায়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসা শুরু করলে, সেটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
আসুন জেনে নিই, একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য কী কী ধাপ অনুসরণ করা উচিত:
পণ্য/সার্ভিস
কোন পণ্য বা সেবা দিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন, সেটা প্রথমেই ঠিক করে নিন। অনলাইনে হাজার হাজার উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবা বিক্রি করছেন। কিন্তু অন্যকে অনুকরণ করার চেয়ে, আপনি যেসব পণ্য ভালো জানেন এবং বিশ্বাস করেন, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করুন। আপনার পণ্য যদি আপনি নিজে বা আপনার পরিবার-বন্ধুবান্ধব ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে এটা আরও ভালো। এই ছোট্ট চিন্তা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে এবং আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনি সঠিক পথে আছেন কিনা।
মার্কেট অ্যানালাইসিস
কোন ব্যবসা শুরু করবেন তা নির্বাচন করার সময়, পণ্য বা সেবার বাজার চাহিদা কতটা, সেটা খুব ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। কে আপনার পণ্য কিনবে এবং কতবার কিনবে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করাও জরূরি। কারণ, যদি আপনি এমন একটি পণ্য বেছে নেন যার চাহিদা নেই, অথবা আপনার পণ্যটি এমন লোকদের কাছে বিক্রি করতে চান যাদের সেটির প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনার ব্যবসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরি। আপনার লক্ষ্যবস্তু গ্রাহকদের নিয়ে গবেষণা করুন, সার্ভে করুন এবং প্রতিযোগীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার গ্রাহকরা কী চান এবং আপনার ব্যবসা থেকে কী আশা করেন, সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। কোনো ভুল হলে তা থেকে শিখুন এবং ভবিষ্যতে সে অনুযায়ী আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পরিবর্তন করুন।
বিজনেস প্ল্যান
অনেক নতুন উদ্যোক্তা একটা সাধারণ ভুল করে থাকেন – তারা কোনো লিখিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছাড়াই কাজ শুরু করে দেন। শুধু মনে মনে কিছু ধারণা থাকলেই হবে না। একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার ব্যবসায়ের সব দিককে স্পষ্ট করে তোলে। একটি প্রাক্কলিত পরিকল্পনা আপনাকে আপনার ব্যবসায়ের শক্তি ও দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে। এটি আপনাকে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, একটি কার্যকর কৌশল তৈরি করতে এবং আপনার ব্যবসায়কে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আপনাকে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সমস্যাগুলির পূর্বাভাস দিতে এবং সেগুলির জন্য প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, এটি আপনাকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং আপনার ব্যবসায়ের জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করতে সহায়তা করবে।
প্রয়োজনীয় লিগ্যাল ডকুমেন্ট
আপনার ব্যবসা শুরুর পূর্বে সকল প্রয়োজনীয় অনুমতি ও লাইসেন্স নিশ্চিত করুন। কোম্পানির আইডি, ব্যবসায়িক লাইসেন্স, টিন এবং পণ্যসম্পর্কিত যে কোনো বিশেষ অনুমতিপত্রের তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে নিন। এগুলো অনলাইনে বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সম্পন্ন করে নেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন।
ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া
অফলাইন দোকানের মতোই, অনলাইনেও আপনি আপনার পণ্য সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে, আপনার ওয়েবসাইট হবে আপনার ডিজিটাল দোকান। একটি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে এবং গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে। অনলাইন ব্যবসায়ে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু, ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে অনেক টাকা খরচ হবে, এমন ধারণা ভুল। আজকাল, অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে আপনি খুব সহজেই এবং কম খরচে নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে আপনি আপনার গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার জন্য একটি কমিউনিটি তৈরি করুন। এটি আপনার গ্রাহকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। তবে, সামাজিক মিডিয়াকে শুধু একটি বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবেন না। একটি পূর্ণাঙ্গ ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ব্যবসায়কে আরও বড় করার চেষ্টা করুন। কারণ, সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর নীতিমালা পরিবর্তিত হতে পারে এবং আপনার ব্যবসায়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
একটি সফল অনলাইন ব্যবসা গড়ে তুলতে, আপনাকে নিজের ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মিডিয়া উভয়কেই কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।
মার্কেটিং এবং সেলস
আপনার ব্যবসা শুরু হয়েছে, এবার লক্ষ্য বিক্রয় বাড়ানো। শুধু পোস্ট বুস্ট বা ক্যাম্পেইন করেই বিক্রয় বাড়ানো যাবে না। সঠিক মার্কেটিং ফানেল অনুসরণ করেই আপনি আপনার পণ্যের দিকে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন। প্রথমে আপনার আদর্শ গ্রাহককে চিনতে হবে। এই আদর্শ গ্রাহকের প্রোফাইল তৈরি করে, আপনি আপনার সব মার্কেটিং কৌশল তার দিকেই নির্দেশ করতে পারবেন। ওয়েবসাইটে এই আদর্শ গ্রাহককে আকৃষ্ট করুন, তাদের আবার আপনার ওয়েবসাইটে ফিরিয়ে আনুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আকর্ষণীয় পোস্ট দিয়ে আপনার ব্র্যান্ডকে পরিচিত করুন। ভাইরাল মার্কেটিংয়ের উপর জোর দিন, এতে পেইড মার্কেটিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আপনার পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
অনলাইন ব্যবসা শুরু করা সহজ হলেও টিকে থাকা কঠিন। অনলাইনে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আপনাকে সঠিকভাবে সবকিছু পরিচালনা করতে হবে। যদি আপনি সঠিক পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আপনার ব্যবসা অন্যদের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে।
সাপ্লাই চেইন ও ডিস্ট্রিবিউশন
আপনার ব্যবসায়ের সফলতা অনেকটা নির্ভর করবে আপনি কীভাবে পণ্য সংগ্রহ করেন এবং তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন। পণ্যের উৎস স্থির করার আগে ভালো করে গবেষণা করুন। একাধিক উৎস থাকলে প্রতিযোগিতামূলক দাম পাবেন এবং পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, গ্রাহক সন্তুষ্টিই হবে আপনার ব্যবসার মূল চাবিকাঠি।
যদি আপনি নিজেই পণ্য উৎপাদন করেন, তাহলে উৎপাদন খরচ এবং বিতরণ পদ্ধতি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিন। অনলাইন ব্যবসায়ে বিতরণ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিতরণ ব্যবস্থা প্রয়োজন। যেমন, খাবারের বিতরণ ব্যবস্থা ফ্যাশন পণ্যের বিতরণ ব্যবস্থার থেকে আলাদা হবে।
একটি শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার পণ্য সঠিক সময়ে এবং সঠিক অবস্থায় গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কারণ, গ্রাহকরা না শুধুমাত্র ভালো পণ্য চায়, তারা চায় যে তাদের পণ্যটি দ্রুত এবং নিরাপদে পৌঁছে যাক।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটি সফল অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য পণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত সবকিছুই সুপরিকল্পিত হতে হবে। গ্রাহকের চাহিদা বুঝে এবং একটি কার্যকর বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলে আপনি আপনার ব্যবসায়কে সফল করতে পারবেন।
প্রথমে আপনি একজন গ্রাহককে লক্ষ্য করুন, এরপর দশ জন, তারপর শত জন এভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিক্রয় কৌশল ঠিক করুন এবং সে অনুযায়ী বিপণন করুন। ধৈর্য ধরে ব্যবসা বাড়ান। একদিনে সফলতা আসবে না, লক্ষ্য ধরে ধরে এগোতে হবে। সবসময় নতুন প্রবণতা বা নতুন নিয়মের সাথে খোঁজ রাখুন। গ্রাহকের কথা শুনুন, তাদের মতামত গুরুত্ব দিন। ব্যবসায়ে গ্রাহকই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে যদি আপনি আপনার ব্যবসায়ে নতুনত্ব আনতে পারেন, তাহলে সহজেই আপনি একটা শক্তিশালী গ্রাহকবৃন্দ তৈরি করতে পারবেন, যা আপনার ব্যবসার বিক্রয় চালিয়ে রাখতে পারবে এবং নিজের ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে।
অনলাইন ব্যবসার জন্য ফ্রি ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করতে ভিজিট করুন www.bitcommerz.com এ।
আপনার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা –
- অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য ১০ টি কার্যকরী কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি
- https://blog.bitcommerz.com/%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b8-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%bf/
- অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য কাস্টমার রিভিউ কেনো প্রয়োজন